
এক রৌদ্রজ্জ্বল সকালে নাস্তার টেবিলে রাখা ডিম-ঝুরি থেকে চোখ সরিয়ে বাগানের দিকে তাকাতেই সেখানে সোনালী রঙের শিংওয়ালা একটা সাদা পংখীরাজ ঘোড়া দেখতে পেল লোকটা; দেখল ঘোড়াটা বাগানের গোলাপগুলো তুলছে। এই দৃশ্য দেখেই হুড়মুড় করে বেড্রুমের দিকে গেল লোকটা। সেখানে তার স্ত্রী তখনও ঘুমাচ্ছে। সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে তুলল; বলল, “বাগানে একটা পংখীরাজ ঘোড়া!!! গোলাপ খাচ্ছে!!!” বিরক্তিভরা এক চোখ খুলে লোকটার দিকে তাকাল তার স্ত্রী।
“পংখীরাজ ঘোড়া রূপকথার প্রাণী”—এই কথা বলে মহিলাটা তার স্বামীর দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুলো। লোকটা ধীরে সুস্থে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাগানের দিকে গেল। পংখীরাজ ঘোড়াটা তখনও সেখানেই; তখন সে টিউলিপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিল। “ও পংখীরাজ! এই দিকে,” এই বলে লোকটা একটা লিলি ফুল তুলে পংখীরাজ ঘোড়াটাকে দিল। খুব মনযোগ দিয়ে খেল পংখীরাজ। নিজের বাগানে সত্যিই একটা পংখীরাজ দেখে আবেগের উচ্ছ্বাসে সে আবার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আবারো তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে তুলল; বলল, “জানো, পংখীরাজ ঘোড়াটা না একটা লিলি ফুল খেল।” মহিলাটা এবার বিছানায় উঠে বসে তার স্বামীর দিকে চোখ পাকিয়ে রইল; বলল, “তুমি একটা পাগল, আমি তোমাকে পাগলা-গারদে পাঠাব।”
লোকটা, যে কিনা “পাগল” আর “পাগলা-গারদ” এই শব্দ দুটো কখনই পছন্দ করত না, আর বিশেষ করে এমন রৌদ্রজ্জ্বল দিনে যে-দিন কিনা বাগানে পংখীরাজ ঘোড়া উপস্থিত সে-দিন এমন শব্দের ব্যবহার সে আরো মানতে পারছিল না। মুহূর্তের জন্য ভেবে নিয়ে লোকটা বলল, “দেখা যাবে।” সে দরজার দিকে আগালো। স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ঘোড়াটার কপালের ঠিক মাঝখানে একটা সোনালী রঙের শিং আছে।” তারপর সে পংখীরাজ ঘোড়াটাকে দেখতে বাগানে ফেরত গেল; কিন্তু পংখীরাজ ঘোড়াটা ততক্ষণে চলে গেছে। তো, লোকটা গোলাপগুলোর মধ্যে বসে ঘুমিয়ে পড়ল।
স্বামী বাড়ির বাইরে যেতেই সেই মহিলা বিছানা ছেড়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নিল। সে বেশ উতলা হয়ে উঠেছিল, তার চোখে তখন খুশির ঝিলিক। সে পুলিশকে একটা ফোন করল আর একটা ফোন করল এক সাইক্রিয়াটিস্টকে। সে তাদেরকে দ্রুত তার বাড়িতে আসতে বলল। একটা স্ট্রেট-জ্যাকেটও সাথে আনতে বলল। পুলিশ আর সাইক্রিয়াটিস্ট আসার পরে চেয়ারে বসে তারা খুব আগ্রহভরে মহিলার দিকে তাকিয়ে রইল।
মহিলাটা বলল, “আমার স্বামী আজ সকালে একটা পংখীরাজ ঘোড়া দেখেছে।” পুলিশ সাইক্রিয়াটিস্টের দিকে আর সাইক্রিয়াটিস্ট পুলিশের দিকে তাকাল। মহিলাটি বলল, “ও বলেছে যে পংখীরাজ ঘোড়াটা একটা লিলি ফুল খেয়েছে। এবার সাইক্রিয়াটিস্ট পুলিশের দিকে আর পুলিশ সাইক্রিয়াটিস্টের দিকে তাকাল। মহিলাটি বলল, “ও বলেছে ওটার কপালের মাঝখানে নাকি একটি সোনালী শিং আছে।” সাইক্রিয়াটিস্টের কাছ থেকে বিধিবৎ ইশারা পেয়ে পুলিশের দল তাদের চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে মহিলাটিকে পাকড়াও করল। যেহেতু মহিলাটা ভয়াবহ কুস্তি বাধিয়ে বসেছিল তাই তাকে বশে আনতে পুলিশের বেগ পেতে হল, কিন্তু শেষ অবধি তারা তাকে বাগে আনতে পারল। যে মুহূর্তে তারা মহিলাটাকে স্ট্রেট-জ্যাকেট পরিয়ে ফেলেছে ঠিক তখনই তার স্বামী বাড়িতে ফেরত আসল।
তাকে পেয়ে পুলিশ জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি আপনার স্ত্রীকে কোন পংখীরাজ ঘোড়া দেখার কথা বলেছেন?” লোকটা উত্তর করল, “না! একদম না! পংখীরাজ ঘোড়াতো রূপকথার প্রাণী!” উত্তর শুনে সাইক্রিয়াটিস্ট বলল, “এটুকুই আমার জানার ছিল। ওনাকে নিয়ে যান (পুলিশকে উদ্দেশ্য করে)। আমি দুঃখিত, স্যার, আপনার স্ত্রী একদম উন্মাদ।”
তো, শাপশাপন্ত আর চিৎকার করতে থাকা মহিলাটাকে তারা তুলে নিয়ে গেল আর একটা পাগলা গারদে আটকে রাখল। তারপর থেকে সেই মহিলার স্বামী সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকল।
নৈতিক শিক্ষাঃ কাঁঠাল না পাকা অবধি গোঁফে তেল দিও না।